বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন
ডেমরা (ঢাকা ) প্রতিনিধি, কালের খবর :
ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর ব্যস্ততম সড়ক। এ দুটি সড়কের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম লিংক রোড।
ডেমরা দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাস-ট্রাক, যাত্রীবাহী ছোট-বড় যানবাহন ও পণ্যবাহী বড় বড় ট্যাঙ্ক-লরিসহ অন্তত ৩০টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন আবার সড়কে নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করে না।
আর এখানকার সড়ক ও যানবাহন স্ট্যান্ডে কোনো ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং না থাকায় প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হন পথচারীরা। এতে প্রতিনিয়ত ডেমরায় ছোট বড় দুর্ঘটনা, অঙ্গহানি ও প্রাণনাশের মতো ঘটনা ঘটছে। আর ওই সড়ক দুটিতে ৭ বছরে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, নগরীর ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা হচ্ছে এখানকার শেষ গন্তব্যস্থল। আর স্টাফ কোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার লাখো মানুষের যাতায়াত।
এদিকে যাতায়াত সুবিধাসহ নগরের প্রাণকেন্দ্রের খুব কাছে বলে স্বাধীনতার পর থেকেই ডেমরায় মানুষের বসবাস বাড়তে থাকে। ডেমরা এলাকায় বহিরাগত ও ভাড়াটিয়াসহ অন্তত ৮ লাখ মানুষের বসবাস।
আর পেশাগত কারণে প্রতিনিয়ত শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটছে মানুষ। তাই প্রতিদিন সকালে স্টাফ কোয়ার্টারে শুরু হয় অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গার্মেন্ট ও কলকারখানাগামী লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা।
জানা যায়, স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডেমরা-রামপুরা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন রুটে অন্তত ১৫০টি যাত্রীবাহী বাসসহ বেশ কিছু লেগুনা ও অন্যান্য পরিবহন চলাচল করে।
কিন্তু স্টাফ কোয়ার্টারে কোনো ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং না থাকায় মানুষ যথাযথভাবে রাস্তা পারাপার হতে পারে না। ঝুঁকি নিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।
ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্টাফ কোয়ার্টার গোল চত্বর ট্রাফিক আইল্যান্ডের আশপাশ দিয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এদিকে সুলতানা কামাল সেতুর পশ্চিম পাশের চৌরাস্তা থেকে দ্রুতগামী যানবাহন ছুটছে ঢাকার দিকে।
একইভাবে যাত্রাবাড়ী ও রামপুরা থেকে আসা বিভিন্ন দ্রুতগামী যানবাহন ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। সে সঙ্গে বেপরোয়াভাবে চলছে ছোট বড় অন্যান্য যানবাহন। বেশিরভাগ চালক সড়কের নিয়ম-কানুন না মেনেই দেদার গাড়ি চালাচ্ছেন।
এদিকে, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে হাজী হোসেন প্লাজা মার্কেট সংলগ্ন ডেমরা-রামপুরা সড়কের পাশে স্টপেজে কয়েকটি বাসে যাত্রী ওঠানামা করছে।
এতে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই রাস্তার অপর পাশে ফুটপাতে অস্থায়ী অবৈধ দোকানপাট ও সিএনজিচালিত আটোরিকশার স্ট্যান্ড থাকায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কোনো ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং না থাকায় রাস্তা পারাপারে প্রতিদিনই সমস্যায় পড়ছেন লাখো মানুষ।
প্রায়ই নানা দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীদের। স্টাফ কোয়ার্টারে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হওয়া যেন একটি যুদ্ধ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য রাস্তা পারাপার হওয়া বেশি বিপজ্জনক। এখানে অবশ্যই ফুটওভারব্রিজ প্রয়োজন।
সুমাইয়া জান্নাত নামে এক কলেজছাত্রী কালের খবরকে বলেন, আমি রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকা থেকে প্রতিদিন গোলাম মোস্তফা কলেজে আসি। প্রথমে স্টাফ কোয়ার্টার নেমে রাস্তা পাড় হয়ে অন্য গাড়িতে উঠতে হয়। রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
গত বছর বাসের ধাক্কায় ওই কলেজের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কিছুদিন আগে ডেমরা-রামপুরা সড়কে ইরাম নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
যুবলীগ নেতা আব্দুল হক নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা কালের খবরকে বলেন, ডেমরার প্রধান দুটি সড়ক পথচারীদের জন্য একেবারেই অনিরাপদ। প্রতিবছর ওই দুটি সড়কে দিন দিন মৃত্যুর হার বাড়ছে। তাই অনতিবিলম্বে এখানে ফুটওভারব্রিজ, আন্ডার পাসসহ রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে জেব্রা ক্রসিং স্থাপন করা জরুরী প্রয়োজন।
রামপুরা ট্রাফিক জোনের টিআই বিপ্লব ভৌমিক কালের খবরকে বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়ক দুটি অত্যন্ত ব্যস্ততম। তবে যানবাহন চলাচলের তুলনায় সড়ক দুটি অপ্রশস্ত বলে এখানে পথচারীদের রাস্তা পারাপারে ঝুঁকি বেশি। তাই এখানে ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং জরুরি।
ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি ইকবাল মোবাইল ফোনে কালের খবরকে বলেন, শিগগির ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ৬ লেনের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে।
সড়কটি পরিকল্পিতভাকে করা হবে বলে এখানে ১১টি আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আর ডেমরা-রামপুরা সড়কটিও ভবিষ্যতে পরিকল্পিতভাবে ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দুর্ঘটনা একেবারেই কমে যাবে।